নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সেজে ২৪ বছর বয়সী রোগীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম মঞ্জুরুল হায়দার জনি। ৩৫ বছর বয়সী জনি চাটখিলে বসবাসকারী শাহাদাত উল্যাহর ছেলে।
তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সেকমো) মনিরুল হায়দার মনিরের ভাই। এ ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ তার।
এরই মধ্যে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
শুক্রবার সকালে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মোশতাক আহমেদ বলেন, অভিযোগের তদন্তে হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট ডা. তানজিনা হককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাসপাতালের (আরএমও ডা. শহীদুল আহমেদ নয়ন, ডা. ইকরাম বিন ফারুক ও নার্সিং সুপারভাইজার আয়েশা আক্তার। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ নম্বর কেবিনে ভর্তি হই। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করি। এরপর ২০ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসক সেজে আমার কেবিনে আসেন জনি।
আমার শরীর ঘামছে দেখে কেবিনে থাকা আমার ভাই ও বোনকে জামা (গেঞ্জি) কেনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে তিনি আমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে হেনস্তা করেন। একপর্যায়ে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এতে আমি চিৎকার দিতে চাইলে তিনি গলা টিপে হত্যা করতে চান। ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত ছিলেন।
ওই নারীর বোন বলেন, ঘটনার পরদিন হাসপাতাল থেকে আমার বোনকে ঢাকায় স্থানান্তর করে নিয়ে আসি। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পর বিভিন্নভাবে হয়রানির চেষ্টা চলছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় এমপি এইচএম ইব্রাহীমকেও জানিয়েছি। তিনি আমাদের আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, হাসপাতালে সামনে ‘হায়দার ফার্মেসি’ নামে জনিদের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। জনি স্থানীয় হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ বিষয়ে সেকমো মনিরুল হায়দার বলেন, বুধবার দুপুরে ডিউটি শেষ করে বাসায় চলে যাই। পরে বিষয়টি শুনেছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আলাদা থাকছেন জনি। হায়দার ফার্মেসির মালিকও তার আরেক বড় ভাই মফিজুল হায়দার।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শহীদুল আহমেদ নয়ন বলেন, রোগীকে হেনস্তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
চাটখিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রোগীর লোকজন লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় ঘটনার দিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের এমপি এইচএম ইব্রাহীম বলেন, বিষয়টি ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানার ওসি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।