সময়ের নুর ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আসছে নানান পরিবর্তন। যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। তবু থেমে থামছে না ছিনতাই, চুরির মতো ঘটনা। দুর্বৃত্তরা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত থাকছে বেশি বেপরোয়া। এসময় তারা খুন করতেও দ্বিধা করছে না। ভুক্তভোগীরা পুলিশি ঝামেলা এড়াতে থানায় অভিযোগ করেন কম। এসব কিছু বিবেচনায় অপরাধী ধরতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই প্রযুক্তি অপরাধীদের আগের অপরাধের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানান দেবে অপরাধীর অবস্থান। গত বছর কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর, শ্যামলীর হলিল্যান্ড গলিতে বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক আনোয়ার শহীদকে (৭২) ছুরিকাঘাতে হত্যা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের দুটি সোনার দোকানে প্রায় সাতশ ভরি স্বর্ণালংকার চুরিসহ বেশকিছু ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। সময় লাগে কয়েকদিন।
এবার আরও দ্রুত অপরাধী শনাক্ত ও সাইবার ইউনিটের সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ ইউনিট শুরু করেছে ডিবি। এরই মধ্যে রাজধানীর শতাধিক অপরাধপ্রবণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আরও একশ এলাকায় এ ধরনের ক্যামেরা লাগানোর। এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোতে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাসহ ‘ঢাকার ঈগলের চোখ’ হবে এ সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ইউনিট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিসিটিভিতে ঢাকার কোনো এলাকায় অসঙ্গতি দেখতে পেলে পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা যাবে। মূলত এটি পুরোপুরি চালু হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে। এখানে আধুনিক সফটওয়্যার সংযুক্ত রয়েছে। ফলে সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই অপরাধীর চেহারা শনাক্তসহ তার কোনো ডাটাবেজ থাকলে তা সহজেই বের করা যাবে। ক্যামেরাগুলো গাড়ির নম্বরের দিকেও খেয়াল রাখবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে নম্বরপ্লেটের ছবি নেবে। এ ইউনিট ডিএমপির ৫০টি থানা ও অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গেও সমন্বয় করবে।
১৫ বছর আগে রাজধানীর ৪৩টি পয়েন্টে মাত্র ১৮৫টি ক্যামেরা নিয়ে সিসিটিভি মনিটরিং কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। পর্যবেক্ষণের জন্য আব্দুল গনি রোডে পুলিশ কমান্ড সেন্টারে একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ খোলা হয়। তবে নানা কারণে এ কর্মকাণ্ডের পরিধি পরে আর বাড়েনি।
এসব বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ফোন ট্রাকিং করে গ্রেফতারের কথা শুনে আসামিরা মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেন। অপরাধ দমন ও আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশকে তাদের চেয়েও চতুর ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হতে হয়। আমরা সব সময় অপরাধীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চাই। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা। সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করে ডিবির সক্ষমতা ও ডিবির সদস্যদের অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। অপরাধ দমনে আমরা অবলম্বন করে কাজ করে যাচ্ছি জিরো টলারেন্স নীতি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবির সক্ষমতা আরও বেড়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে অপরাধের ধরন। ঢাকা মহানগরীর অপরাধপ্রবণ যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে শতাধিক অপরাধপ্রবণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আরও একশ এলাকায় এ ধরনের ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি থাকবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি মোটরসাইকেলে অপরাধ করে যদি কেউ পালিয়ে যায় সিসি ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোটরসাইকেলের নম্বর চলে আসবে। এরপর ওই মোটরসাইকেলটি ঢাকা শহরের কোন এলাকার কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শনাক্ত করবে। একইভাবে ছিনতাইকারীদের ছবি ক্যামেরাগুলোতে ইনপুট দিয়ে রাখা হবে। এতে ওই ছিনতাইকারীদের কেউ রাস্তায় বের হলেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের জানাতে থাকবে ছিনতাইকারী ওমুক রাস্তায় বেরিয়েছে।
‘ঢাকা শহরে যতগুলো চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলোর নম্বরপ্লেট সফটওয়্যারে যুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর বিআরটিএর তথ্য নিয়ে দেখা হবে এই মোটরসাইকেলের মালিক কে। যদি বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভুয়া থাকে তাহলে ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর চেক করে মূল মালিককে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।’
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ডিবিতে তৈরি করা অত্যাধুনিক ল্যাবে কোনো অপরাধীর আঙুলের সামান্য ছাপ, ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা মোটরসাইকেল নম্বরপ্লেট অথবা শুধু তার কিংবা তার বাবার নাম পেলেই ওই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। অপরাধী শনাক্তে একটি মাত্র তথ্য পেলেই যথেষ্ট। অপরাধী দেশের কোথায়, কত অপরাধ করেছে, সেই তথ্য মুহূর্তের মধ্যে চলে আসবে।