জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তরের লনের বাগানে বৃক্ষরোপণ ও বেঞ্চ উৎসর্গ প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের উত্তর লনের বাগানে বৃক্ষরোপণ করেছেন। সেইসঙ্গে একটি বেঞ্চও উৎসর্গ করেছেন তিনি।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় এ বৃক্ষরোপণ ও বেঞ্চ উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ বৃক্ষটাও শতবর্ষের ওপর টিকে থাকবে এবং শান্তির বারতা বয়ে বেড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সবসময় শান্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি একদিকে যেমন বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কথা ভেবেছেন, অন্যদিকে সারাবিশ্বের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য জর্জরিত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথাও উচ্চারণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। কারণ, এতে করেই শান্তি আসবে। তিনি শান্তির সন্ধানেই ছিলেন। শান্তির জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শান্তি ছাড়া কখনো কোনো দেশের উন্নতি হয় না।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা আমরা খুব ভালো বুঝি যে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই উন্নতি হওয়া সম্ভব’।
তিনি আরও বলেন, আজ এখানে একটি বৃক্ষরোপণ করা হলো, এই সেপ্টেম্বর মাসেই (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়, এরপরই জাতির পিতা জাতিসংঘে আসেন এবং এখানে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন (২৫ সেপ্টেম্বর)। কাজেই এ মাসটিতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তরের লনে বাগানে তার জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপন করা হলো এবং একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করা হলো। এ বৃক্ষটাও শতবর্ষের ওপর টিকে থাকবে এবং শান্তির বারতাই বয়ে বেড়াবে।
বৃক্ষরোপণকালে বলেন, বৃক্ষ যেমন পরিবেশ রক্ষা করে, তেমনি মানুষকে খাদ্য ও ছায়া দেয়। রক্ষা করে মানুষের জীবনও।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের দেড় বছর পরে এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।
তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান। এদিন সকালে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে যাত্রাবিরতি শেষে স্থানীয় সময় রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী সফরকালীন আবাসস্থল লোটে নিউইর্য়ক প্যালেস হোটেলে যান। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশনে যোগ দিতে গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৯০১ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন শেখ হাসিনা। ওইদিন স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে সফরকালীন আবাসস্থলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের গোলটেবিল বৈঠকে বসবেন তিনি।
২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সফরকালীন আবাসস্থল থেকে ‘হোয়াইট হাউজ গ্লোবাল কোভিড-১৯ সামিট: ইন্ডিং দ্য প্যানডেমিক অ্যান্ড বিল্ডিং ব্যাক বেটার’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টায় নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট: টেকসই সমাধান অত্যাবশ্যক’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) যুক্ত হবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ‘ইভেন্ট অব লিডারস নেটওয়ার্ক অন ডেলিভারিং অন দ্য ইউএন কমন এজেন্ডা: অ্যাকশন টু অ্যাচিভ ইকুয়্যলিটি অ্যান্ড কনক্লুশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। দুপুর ১টায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সভাপতিত্বে ‘ফুড সিস্টেমস সামিট অ্যাজ পার্ট অব দ্য ডিকেড অব অ্যাকশন টু অ্যাচিভ দ্য সাসটেইবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজিএস) বাই ২০৩০’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় তিনি বক্তব্য দেবেন।
ওইদিনই দুপুরে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পর্যায়ক্রমে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নগুইয়েন জুয়ান ফুতের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। দুপুরে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন। রাত ৮টায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন তিনি।
স্থানীয় সময় ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইর্য়ক থেকে ওয়াশিংটন যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন তিনি। ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারল্যান্সের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৯০৪ যোগে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির উদ্দেশে ওয়াশিংটন ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।
দুই সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে ১ অক্টোবর সকাল পৌনে ৮টায় হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল পৌনে ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারল্যান্সের বিজি-১৯০৫ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সোয়া ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।