ছবি সংগৃহিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতে মুসলিম নারীদের তাদের অজান্তেই অনলাইনে নকল “নিলামে” বিক্রয়ের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
“দিনের সেরা সুলি চুক্তি” শিরোনামে সম্প্রতি ৮০ জনেরও বেশি নারীর ছবি “গিটহাব” নামে একটি উন্মুক্ত সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট। “সুলি” শব্দটি মুসলিম নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি উপাধি।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে গবেষক, বিশ্লেষক, শিল্পী ও সাংবাদিকসহ মুসলিম নারীরা অন্তর্ভুক্ত আছেন।ভুক্তভোগীরা বলছেন, সারাদেশে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষই এর পিছনে দায়ী।
হানা মহসিন খান নামে একজন পাইলট গত সপ্তাহে একটি লিংক খুঁজে পান যেখানে নিলামের জন্য বিভিন্ন মুসলিম নারীদের ছবির একটি গ্যালারি ছিল।
তিনি বলেন, “আমাকে আমার এক বন্ধু লিংকটি দেয় আর লিংকে প্রবেশ করে চতুর্থ ছবিতে নিজেকে আবিষ্কার করি। সেখানে আমাকে ’দাসী’ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছিল।”
হানা মহসিন আরও বলেন, “আমার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল একটি স্রোত বইছিল। সেদিন থেকে আজ অবধি আমি নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।”
এদিকে নারীদের ছবি ব্যবহার করা ওয়েবসাইট “গিটহাব” বলছে, ইতোমধ্যে তারা ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টগুলো নারীদের হয়রানি, বৈষম্য এবং সহিংসতায় প্ররোচিত করা এবং তাদের নীতি লঙ্ঘন করার কারণে বাতিল করেছে।
এ বিষয়ে দিল্লি পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির ১৭ কোটি মুসলিম নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে অনুভব করে আসছেন।
ফাতিমা খান নামে এক ভারতীয় সাংবাদিক বলেন, “ভুয়া ’নিলাম’ মুসলিম বিদ্বেষেরই নতুন রুপ।“ তার নিজের ছবিও গিটহাবে ছিল।
এক টুইটে ফাতিমা বলেন, এটি কীভাবে গ্রহণযোগ্য? যারা এই তালিকা তৈরি করেছে তাদের কী শাস্তি দেওয়া হবে? আর সেটাই বা যদি দেওয়া হয় তবে কবে? মুসলিম পুরুষদের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে, মুসলমান নারীরা হয়রানির শিকার হয়ে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। এসব কবে শেষ হবে?”
সানিয়া বলেন, “ভারতে হিন্দু ধর্মান্ধদের একটি দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইনকে হাতিয়ার করে নিজেদের প্রসারিত করছে। তারা সাংবাদিক, সমাজকর্মীসহ সবাইকে হাজার হাজার আপত্তিজনক বার্তা দিয়ে এমনভাবে ঘিরে ফেলে যে অনেকেই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয় ।”
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির ১৭ কোটি মুসলিম নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে অনুভব করে আসছেন।
ভারতে অনলাইনে নারীদের সহিংসতা, ধর্ষণ এবং অশ্লীল ছবি প্রকাশের হুমকি অনেক বিশাল একটি সমস্যা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্লান ইন্টারন্যাশনাল ৩১টি দেশের প্রায় ১৪ হাজার মেয়ের উপর ২০২০ সালে একটি জরিপ করে দেখেছে, জরিপের অর্ধেকেরও বেশি নারী এ ধরনের ঘটনার শিকার।
জরিপে বলা হয়, “অনলাইনে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য বা ক্ষমতায়নের পরিবর্তে মেয়েরা বেশিরভাগ সময়েই হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয়। যার কারণে এক সময় অনলাইন থেকে দূরে চলে যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যম সংস্থায় কর্মরত ৩৪ বছর বয়সী আহমদ বলেন, “ভারতে মুসলিম মহিলারা একটি বিশেষ লক্ষ্য। এটি প্রথমে ছোট ছোট নির্যাতন দিয়ে এটি শুরু হয়। পরে মৃত্যু এবং ধর্ষণের হুমকিতে তা পরিণত হয়।”
তিনি বলেন, “আমার কাছে গত বছরের ৭৮২টি আপত্তিকর মন্তব্যের স্ক্রিনশট রয়েছে যার বেশির ভাগই টুইটারে করা হয়েছে।”
তিনি বিশ্বাস করেন, ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে কুৎসিত ইইসলামবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরাধীরা “রাজনৈতিক সমর্থন” হিসেবে এসব কাজ করছেন।
আহমদ জানান, তিনি টুইটারে একাধিক অবমাননাকর পোস্টের বিষয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি টুইটার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও একে মুসলিম বিরোধী বলে অস্বীকার করেছে সরকার।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন