বিশেষ প্রতিবেদক :
ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পেরউন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতায় লেজেগোবরে অবস্থা বিরাজ করছে। সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনীর মহিপাল থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৩০ কিলোমিটার সড়কের ফেনী অংশের ২০ কিলোমিটারে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছেচে। সড়কটির দুই লেন থেকে ফোরলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ, গ্যাস, বিটিসিএল ও বনবিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকলেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা।
বিশেষ করে সড়কের ফেনী অংশের ২০ কিলোমিটারে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপ -মেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) এর বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কোনো রকমের সমন্বয় না করে বেপরোয়া ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেপরোয়া কর্মকান্ডে সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, হাজার হাজার গ্রাহক ও সাধারণ মানুষজনকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
এ বিষয়ে দাগনভূঞা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, সড়কের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন বিভিন্ন বাসাবাড়ি, হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে, এটি জানা সত্ত্বেও ঠিকাদারের লোকজন মাটি খুঁড়তে গিয়ে কোনো রকমের সতর্কতা অবলম্বন করেননি। স্কেভেটর দিয়ে গ্যাসের লাইন উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু উপজেলার পেন্টাগন হাসপাতাল এলাকার প্রায় দুইশ গ্রাহক তিনদিন গ্যাস সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা না পেয়ে গ্রাহকরা নিজ উদ্যেগে লাইন মেরামত করেছেন।
বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড ফেনীর ব্যবস্থাপক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ফোরলেন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে সর্বদা প্রস্তুত থাকলেও ঠিকাদার তাদের সাথে কোনো রকমের সমন্বয় করেন না। ঠিকাদার তাঁর মতো করে কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বার বার গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। ফলে গ্যাসের গ্রাহকেরা চরম হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাগনভূঞা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি বিকেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র রোলার চালক খামখেয়ালিপনার কারনে দাগনভূঞা থানার পাশে বিদ্যুতের একটি খুটি ভেঙ্গে ফেলেন। এতে করে দাগনভূঞা পৌরসভার আংশিক, রামনগর ও ইয়াকুবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই এলাকার ১২ হাজারের বেশি গ্রাহককে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিদ্যুতের খুটি নষ্ট করছে।
ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের ফেনী অংশের ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ফোরলেন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে আমরা ঠিকমতো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, গ্যাসের লাইন সড়কের নিচে থাকায় লাইন চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার সহায়তা চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। মাটির নিচের গ্যাসের লাইন চিহ্নিত করতে না পারায় কাজ করতে গিয়ে কোথাও গ্যাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া সড়কের পাশ থেকে বিদ্যুতের লাইন এবং মাতুভূঞা ও ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের দিঘির সামনে থেকে ময়লার স্তুপ সরিয়ে না নেওয়ায় উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। তবে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সময়মতো সহযোগিতা না পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, ফোরলেন প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে সড়ক বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন। ফেনী সড়ক বিভাগ থেকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদারকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সতর্কতার সাথে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া আছে।