বিশেষ প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চাঞ্চল্যকর একই পরিবারের চারজনেক হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে নিহত গণি মিয়ার বড় মেয়ে সোনিয়া বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সোনিয়া উপজেলার কাকরাইদ গ্রামের শামসু মিয়ার স্ত্রী।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, মধুপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিক কামাল।
এদিকে এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন- মধুপুর পৌরসভার মাস্টারবাড়ী এলাকার আবু তাহেরের ছেলে জামাল (৩৫), সালাম (২৭) ও সাইফুল (২৩)।
ওসি তারিক কামাল বলেন শনিবার (১৮ জুলাই) নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে। তারা সম্পর্কে নিহত গনি মিয়ার শ্যালক।
এর আগে শুক্রবার মধুপুর পৌর শহরের পল্লী বিদ্যুৎ রোডের উত্তর আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনটি কক্ষে মরদেহগুলো পড়েছিল। একটি কক্ষে দুটি এবং বাকি দুটি কক্ষে একটি করে মরদেহ পাওয়া যায়। চারজনকেই গলা কেটে এবং কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- আব্দুল গণি মিয়া (৪৫) ও তার স্ত্রী কাদিরন ওরফে বুচি (৩৭) এইচএসসি শিক্ষার্থী ছেলে তাজেল (১৭) এবং মেয়ে সাদিয়া (৯)।
নিহত গণি মিয়ার চাচা শ্বশুর ও প্রতিবেশী হাবেল মিয়া বলেন, উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রাম থেকে এসে প্রায় ৭-৮ বছর আগে গণি মিয়া শ্বশুরবাড়ির কাছে উত্তর আবাসিক এলাকায় ৯ লাখ টাকায় ৬ শতাংশ জমি কিনে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। নিহত আব্দুল গণি মিয়া মধুপুর পৌর এলাকার পোদ্দারবাড়ী গ্রামে মৃত গাজী মিয়ার ছেলে। তিনি রিকশা-ভ্যান কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন।
নিহত গণি মিয়ার শ্যালক জামাল হোসেন বলেন, তার দুলাভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। নিহত ভাগনে তাজেল ধনবাড়ীর ভাইঘাট কলেজের শিক্ষার্থী।
ঘটনাস্থল মধুপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম খান পলাশ জানান, নিহত গণি মিয়া সম্প্রতি এই ওয়ার্ডে বাড়ি করায় তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না তিনি। এছাড়াও নিহত গণি মিয়া এই ওয়ার্ডের ভোটার হননি।
নিহতের গ্রামের বাড়ী মধুপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈন খান বলেন, নিহত গণি মিয়ার আরও দুই ভাই আছেন। এদের মধ্যে আব্দুর রশিদ নামে এক ভাই মারা গেছেন আর আব্দুল লতিফ নামে আরেক ভাই এখনও গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। গত সপ্তাহে আব্দুল লতিফের সঙ্গে মৃত আব্দুর রশিদের ছেলেদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তাকে সালিশের কথা বলা হয়েছিল। তবে করোনার কারণে তিনি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেননি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ওই বাড়ির তিনটি ঘর থেকে চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে একটি কুড়ালও পাওয়া যায়। নিহতদের শরীরে কুড়ালের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি কখন ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না। রুমটি বাইরে থেকে তালাবন্দী অবস্থায় ছিল। কেউ জানতো না এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই এর রহস্য উদ্ঘাটন হবে। তদন্ত শেষেই বলা যাবে এটি ডাকাতি না শুধু হত্যা।