বিশেষ প্রতিদেক :
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মরদেহ ‘জোর করে’ দাফনের অভিযোগ করেছেন তার এক স্বজন।
তার স্ববজন বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর পর দুই দিন পার হলেও তাকে এখনও মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়নি। এদিকে তার ভাইয়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষার যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেখানে আরেকজনের নাম রয়েছে। তার বয়সও ভিন্ন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের গবেষণাগারে পরীক্ষার পর তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ ধরা পড়েনি।
শুক্রবার ( ৩ এপ্রিল) রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, সমস্যার সমাধানেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
গত বুধবার রাতে এই হাসপাতালে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি হয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বাসিন্দা মো. আনারুল হক।
তার ছোট ভাই মাসুদ বলেন, তার ভাই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন, সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়েছিল। বুধবার রাত ৮টার দিকে সেখানেই মারা যান আনারুল।
মাসুদ বলেন, বুধবার রাতে তার ভাইয়ের মুখ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেদিন মরদেহ বুঝিয়ে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি আবারও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান। সে সময় তাকে জানানো হয়, আনারুলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফনের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর চান কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা।
“কিন্তু স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। কাগজগুলো ছুঁইড়া ফেলে দিল। বলল, তুই সই দিলেও লাশ নিয়ে যাব, না দিলেও লাশ নিয়ে যাব। ওইখানে তো আমার কেউ নাই। বাধ্য হয়ে সই দিয়েছি। তারা আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে।”
মাসুদ অভিযোগ করেন, কবরস্থান পর্যন্ত যেতে চাইলেও তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
“আমি বললাম, ভাইয়ের দাফনের সময় পাশে থাকি। কিন্তু তারা আমাকে সেই গাড়িতে নেয়নি। বলে অন্য গাড়িতে আসতে। কিন্তু অনেকক্ষণ পর একটা গাড়ি পাইয়া ফোন দিছি। বলে দাফন করা হয়ে গেছে। এই দুঃখ সারাজীবন ভুলতে পারব না।”
‘জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া’ ওই চিকিৎসক বা কর্মকর্তা কারও নাম বলতে পারেননি মাসুদ। তবে তাদের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন বলে জানান তিনি।
সে অভিযোগ করেন, মৃত্যুর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও তার ভাইয়ের মৃত্যুসনদ বুঝে পাননি। নভেল করোনাভাইরাস সন্দেহে যে পরীক্ষা করা হয়েছে, সেই পরীক্ষার রিপোর্টেও নাম ভুল এসেছে।
হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্রে আনারুলের বয়স লেখা হয়েছে ৫৫ বছর। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১ এপ্রিল ১৯৬৮। সে হিসেবে তার বয়স হয় ৫২ বছর।
তবে শিশু হাসপাতালের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ হেলথ ফাউন্ডেশন থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে তার নাম লেখা হয়েছে আশিক। বয়স লেখা হয়েছে ৭০ বছর।মাসুদ বলেন, “লাশ দেয়নি, দেয়নি মৃত্যুসনদ, পরীক্ষার প্রতিবেদনেও নাম-বয়স ভুল। আমি এখন বাড়ি যাব কীভাবে? আমাকে কেন ছাড়ছেন আমাকেও হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠান। এলাকার মানুষ বলাবলি করছে যদি করোনাভাইরাস না-ই হয় তাহলে ঢাকায় দাফন করল কেন?”
তার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, কাগজপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া বা দুর্ব্যবহার করার বিষয়টি তার জানা নেই। প্রতিবেদনে নাম-বয়স ভুল আসার বিষয়টিও খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
“আমি বিষয়টি দেখব। ডেথ সার্টিফকেট যদি না পেয়ে থাকে আমি আমাদের সহকারী পরিচালককে বিষয়টি জানিয়ে রাখব। তার কাছে এলে তার স্বজনদের মৃত্যুসনদ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
আর প্রতিবেদনে নাম-বয়স ভুল আসার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নাম নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে সেটাও তারা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে বলবে। আমি এখনই তাকে বলে রাখছি। ওই রিপোর্টটাও সঙ্গে নিয়ে আসবে। কেন এটা এমন হল তা দেখার বিষয় আছে। এইটা যদি তার রিপোর্ট না হয়ে থাকে তাহলে তো আরেক ঝামেলা হবে।”
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম