বিশেষ প্রতিবেদক :
এফডিসির যে কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন বলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ দাবি করেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ ঐ কর্মকর্তার গলা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ।
আবু বক্কর সিদ্দিকী বাবু নামের এফডিসির ওই কর্মকর্তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে বলেও সোহেল মাহমুদের ভাষ্য। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, থানা হেফাজতে এফডিসির ফ্লোর ইনচার্জ আবু বক্কর সিদ্দিকীর মৃত্যুর কারণ জানতে দেড় দুই মাস সময় লাগবে। তবে তার পায়ে ও মাথায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন থানা হেফাজতে আসামির মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। আবু বক্করের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন কেউ দোষী হলে অবশ্যই আইন নগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
গত শনিবার দিবাগত ভোররাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় এফডিসির ফ্লোর ইনচার্জ আবু বক্করের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল দেখা দিয়েছে। পরিবার ও সহকর্মীদের দাবি, পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। আর পুলিশের দাবি, থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় শীতের পোশাক দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
সোহেলে মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাছাড়া গলায় কালো দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেই দাগটির নমুনা সংগ্রহ করে প্যাথলজিতে পাঠিয়েছি। বিশেষ করে গলা থেকে টিস্যু নিয়ে পর্যালোচনা করব এটা ফাঁসির দাগ কিনা। এছাড়া ভিসেরা সংগ্রহ ও গলা থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে যে রিপোর্ট আসবে সেটা যাচাই করে বলতে পারব আসলে কি ঘটনা ঘটেছিল।’
দীর্ঘদিন ধরে তো আপনি এই ধরণের ঘটনা দেখছেন, এই ঘটনায় কি মনে হচ্ছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার গায়ে আমরা যে ধরণের আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি সেগুলো মরার জন্য যথেষ্ট না। আমরা আরো পর্যালোচনা করছি, টোট্যাল রিপোর্ট আমাদের কাছে আসলে বলতে পারব।’
আঘাতটা কি ধরণের জানতে চাইলে বলেন, ‘পায়ের যে আঘাতটা সেটা কোন কিছুর সঙ্গে বাড়ি খেয়েছে। মাথায়ও একটা আঘাত সেটা আমরা পর্যালোচনা করছি।’
রিপোর্ট আসতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ভিসেরা এবং হিস্টোরি প্যাথলজির রিপোর্ট আসতে যতটা সময় লাগে, আনুমানিক দেড় থেকে দুই মাস লাগতে পারে।’
আবু বক্কর ঢাকা সিটি নির্বাচনের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের চিঠি পেয়েছিলেন বলেও জানিয়েছে তার সহকর্মীরা।
তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিকী। শনিবার সন্ধ্যায় অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ তাকে আটক করে। রোকসানা আক্তার মায়া নামে এক নারী তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে পুলিশি নির্যাতনে রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এসময় তাকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ইফতেখার ইসলাম অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে আবু বক্করের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলন করছেন এফডিসির তার সহকর্মীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় দেড়ঘন্টা এফডিসির মুল ফটকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন তারা।
এফডিসির কর্মচারী ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমাদের কথা একটাই; আবু বক্করকে কেন থানা হেফাজতে মরতে হলো? আমরা দোষীদের শাস্তি চাই। তাকে (বক্কর) পুলিশ গ্রেপ্তার করছে শনিবার কিন্তু যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে সেটা হয়েছে একদিন পর (রবিবার)। তার মানে পুলিশ তাকে হত্যা করে নতুন নাটক সাজিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘থানায় কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু তার গলায় একটা চিকন দাগ রয়েছে। তার মানে এটা পরিকল্পিত হত্যা।’
ফিরোজা বলেন, ‘ঘটনার দিনও তিনি (বক্কর) ডিউটি শেষ করে আমাদের সঙ্গে দেখা করে বাসায় ফিরছিল। তারপরই শুনলাম তিনি মারা গেছেন।’
খাদেজা বেগম নামে একজন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি নির্বাচনের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের চিঠি পেয়েছিলেন আবু বকর। তার ডিউটি করার কথা ছিল শেওড়াপাড়ায়।’
আন্দোলনরত জামাল শেখ বলেন, ‘আমাদের সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করতে হলে অনুমতি লাগে। পুলিশ কেন তা নিল না? আর আমরা তো জানি থানার কাস্টডিতে ফাঁসি দেয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। এছাড়া সেখানে সিসিটিভি থাকার কথা। তারপরও কীভাবে তিনি গলায় ফাঁস নিলো?’