বিনোদন ডেস্ক :
গতবছরের ১২ মার্চ শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের ডিভোর্স হয়েছে । তাদের নিয়ে নির্মিতব্য বেশ কয়েকটি সিনেমা এই দুই তারকার সর্ম্পক ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ।
যেগুলো বেশিরভাগ অংশের শুটিং শেষ। কিন্তু শাকিব-অপুর শিডিউল না পাওয়ায় বাকী কাজ শেষ করতে পারছেন না পরিচালকরা। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এইসব সিনেমা নিয়ে প্রযোজক পড়েছেন নিশ্চিত লোকসানের মুখে।
অপু বিশ্বাস শুটিং করতে রাজি হলেও শাকিবের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। এই জুটির অসমাপ্ত ছবিগুলোর তালিকায় আছে ‘লাভ ২০১৪’, ‘মা’, ‘ও মাই ডার্লিং’।
কোনো উপায় না পেয়ে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘মাই ডার্লিং’ সিনেমার প্রযোজক মনিরুজ্জামান আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছেন।
তিনি আজ রবিবার(৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মিডিয়া কর্মীদের বলেন, ‘আমার কোটি টাকার লোকসান হবে সেটা আমি বসে বসে দেখতে পারি না। আমি মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই ২০১৪ সালের সিনেমা ‘মাই ডার্লিং’। আজও শেষ হয়নি শুধুমাত্র নায়কের খামখেয়ালিতে। এটা মানা যায়?
তিনি যেখানে ১৭ দিনে একটি ছবির কাজ শেষ করে সেটা মুক্তি দিয়ে দিতে পারেন সেখানে আমার ছবিতে ২৮ দিন কাজ করেও শুটিংটাই শেষ করতে পারলেন না। অনেক কষ্ট আছে। সেসব বলতে চাই না। তার মতো পেশাদার একজন অভিনেতার কাছে এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করে না।
প্রযোজকদের সবাই শুধু দোষ দেন যে আমরা সিনেমা বানাই না। কিন্তু সিনেমা করতে এসে আমরা যে কত রকম হেনস্তার শিকার হই সেটা ক’জনে খবর রাখে? আপনারাও লিখেন না।’
এই প্রযোজক জানান,এরপর ২০১৭ সালের দিকে শাকিব-অপুর সম্পর্কে ফাটল ধরে। তখন থেকে অপুর সঙ্গে কাজ করতে চান না শাকিব। ফলে ‘মাই ডার্লিং’ সিনেমাটির কাজ আর শুরু করা সম্ভব হয়নি।
১৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে চুক্তি হয় শাকিব খানের সঙ্গে। সাইনিংয়েই ১৫ লাখ টাকার চেক দেয়া হয় নায়ককে। কিছুদিন শুটিং করেই নানান টালবাহানা শুরু করেন শাকিব। এ নিয়ে অনেক মিটিং পরামর্শ করেও কোনো সুরাহা পাননি পরিচালক-প্রযোজক।
প্রযোজক মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি এক চেকে শাকিবকে তার পারিশ্রমিকের ১৫ লাখ টাকা দিয়েছি। কিছুদিন কাজ করেই শাকিব শিডিউল নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। এর পরে আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। অপু বিশ্বাসও বিষয়টি জানেন। সাদ্দামের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা দিলে শুটিংয়ে অংশ নেন শাকিব। এর পরে আবার টালবাহানা।
অমিত হাসান, হিমেল ভাইয়ের মধ্যস্ততায় এফডিসির লাইটিং রুমে বসে আরো তিন লাখ টাকা দিয়ে রশিদ নিয়েছি। এর পরও শিডিউল দেয়নি। এটি ছিল অপু বিশ্বাস প্রেগনেন্ট হওয়ার আগের ঘটনা। এর মাঝে সে অপু বিশ্বাসের সঙ্গে অন্য সিনেমায় কাজ করলেও আমাকে শিডিউল দেননি। শিডিউল চাইলে বলতো দিচ্ছি, দিব। কিন্তু দেয়নি। এখন পর্যন্ত সে বিষয়টি নিয়ে কোনো সমাধানে আসেনি। আমার এতো টাকার ক্ষতি কে পূরণ করে দিবে।
সিনেমার দর্শক তো এমনিতেই নেই। তবুও ছবিটা রিলিজ দিতে পারলে যা ফেরত পাওয়া যায়। কিন্তু শুটিং শেষ না করলে সেটা কী করে সম্ভব?’
এ বিষয়ে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোতে অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাননি বলে জানান প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘কয়েক দফায় জানিয়েছি প্রযোজক সমিতিতে। লাভ হয়নি। শিল্পী সমিতিতেও বিষয়টি নিয়ে গিয়েছি। তারা দেখবো-দেখছি বলে পাশ কাটিয়ে গেছে।
সম্প্রতি নির্বাচিত প্রযোজক সমিতিতে আবার অভিযোগ করেছি। তারা আশা দিয়েছেন মিটমাটের। দেখি কি করেন। তারাও তো প্রযোজক। আমার দুঃখটা নিশ্চয়ই বুঝবেন। আমার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই কারোর প্রতি। আমি চাই যে টাকা লগ্নি করেছি সেই টাকার একটা ব্যবস্থা হোক। সিনেমাটি শেষ হোক এবং মুক্তি পাক।
পরিচালক সমিতির কাছে গিয়েছি। তারা পরামর্শ দিয়েছেন আইনি ব্যবস্থা নিতে। সাংগঠনিকভাবে তাদের যা করণীয় সেটুকু দিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’
‘অপু বিশ্বাস শুটিং করতে রাজি আছেন। যদি শাকিব রাজি না হন তাহলে তিনি আমার ক্ষতিপূরণ দেবেন। এই সিনেমার জন্য আমার ২ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে। ক্ষতিপূরণ না পেলে আমি মামলা করবো’- যোগ করেন প্রযোজক মনিরুজ্জামান।
এদিকে ছবিটির ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘২০১৪ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘মাই ডার্লিং’ সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম। কেন সিনেমাটি হয়নি পরিচালক বা প্রযোজকই সেসব বলতে পারবেন। আমার কিছু বলা উচিত হবে না। আমি শিল্পী। কাজ করতে চেয়েছি, কাজ করবো। আমার জন্য কোনো সিনেমা আটকে থাকুক সেটা কখনোই চাই না।
এর আগেও আমি ‘পাংকু জামাই’ ছবির বাকী থাকা শুটিং শেষ করে দিয়েছি। আমার অতো টাকা পয়সা নেই যে কারোর ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো। আমি শুটিং করে নিজেকে দায়মুক্ত করতে প্রস্তুত আছি।