বিশেষ প্রতিনিধি:
একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী হতে মুসলিম বিশ্বের তরুণদের প্রতি আহ্বান এসেছে, যেখানে অন্যদের সঙ্গে ইসলামী চিন্তাবিদরাও ছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের প্রথম দিন এই আহ্বান আসে। জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলে এবং ইন্দোনেশিয়ার সিভিল সোসাইটি সংগঠন ওয়াহিদ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
পরিবেশ সুরক্ষায় কোরান ও হাদিসের নির্দেশনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথ খুঁজতে এই সেমিনার সহায়ক হবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
জাকার্তার ডাবলট্রি হোটেলে এই সম্মেলনে ওয়াহিদ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বাবা মুজতবা হামদি বলেন, “মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। সুতরাং প্রতিনিধি হিসাবে মানুষেরই কাজ প্রকৃতির সুরক্ষা করা।”
মুসলিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের প্রমাণ করতে হবে ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ছাড়া শান্তি আসতে পারে না। মুসলিমদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নবীর উম্মত হিসেবে আমাদেরই সচেতন হতে হবে। নবী নিজেই গাছ লাগিয়েছেন। তাহলে মুসলিমরা কেন এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না?”
‘ধর্মের অপব্যাখ্যা’ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ধর্ম রাজনীতির জন্য ব্যবহার হচ্ছে, সন্ত্রাস প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এটা ধর্ম নয়। কোরানের ভিন্ন ব্যাখ্যা করে অনেকেই সন্ত্রাস করছে। কিন্তু ধর্মে সরাসরি পরিবেশ সংরক্ষণই শুধু নয়, টেকসই সুরক্ষার জন্য বলা হয়েছে।
“জলবায়ু পরিবর্তন শুধু নির্দিষ্ট কোনো দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। টেকই পরিবেশের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।”
পোনডক পেসানত্রেন নুরুল হারমাইনের (ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল) প্রধান তুনান গুরু হাসনাইন জুনাইনি বলেন, “পরিবেশের সুরক্ষা না করা ধর্ম বিরুদ্ধ। যদি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করি তার মানে আমরা ঈশ্বরের সৃষ্টিকে নষ্ট করছি। ধর্ম এটা অনুমোদন করে না।”
“আমাদের আরও বেশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশ সুরক্ষায় তরুণদের সোচ্চার হওয়ার কথা তুলে ধরে ডয়চে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ বলেন, “পরিবেশ সুরক্ষা একটি বৈশ্বিক ইস্যু। আমাদের সতর্ক হওয়ার এখনই সময়।
পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের কাজ এখনই শুরু করতে হবে। তরুণরা এখন এগিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী তারা আন্দোলন করছে এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে এখনই সমাধান চাইছে।”
ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ইবু সিসিলিয়াস সিমিস্ত্রি বলেন, “সামগ্রিকভাবে বিশেষ করে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্ল্যানেট একটাই। সুতরাং এটিকেই সংরক্ষণ করতে হবে।
“ইসলাম শান্তির কথা বলে। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ না করলে শান্তি আসবে না। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজন। ধর্মীয় শিক্ষায়ও বলা হয়েছে, সকল সৃষ্টির প্রতি দয়াপ্রবণ হতে হবে। আর সকলে মিলে যদি আমরা কাজ করি তবেই টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব।”
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে মনে করেন ইসলামী শিক্ষা অর্থই হলো হারাম-হালাল নিয়ে আলোচনা। এর বাইরেও পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসলাম শিক্ষা দেয়, তা অনেকেই ভুলে যান।
“ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, বরং বিশ্ব মানবতার জন্য কাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সমস্যাকে কৌশলগত ইস্যু হিসেবে সামনে রেখে তরুণদের একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে এই সম্মেলন কাজ করবে।”
‘মুসলিম রিপ্রেজেন্ট আ মডেল ফর এনয়ভায়রনমেন্ট স্টুয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক এই সেমিনারে মুসলিম তরুণদের উগ্রবাদ ও সহিংসতা থেকে দূরে রেখে পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার কৌশলগত এবং উদ্ভাবনী পথ খুঁজতেও আলোচনা হবে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ক্লিনআপের প্রতিনিধি অগাস্টিনা ইসকান্দার, দ্যা নোবেল কমিউনিটি অব ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি সুপ্রিত সুহার্তো, পাকিস্তানের পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী এবং সল্যুশন প্রোভাইডার আহমাদ সাব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আবু সায়েম, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড, ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক রিজাল মালিক