নিজস্ব প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের দক্ষিণ মজুপুর মদিনাতুল উলুম নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর আহত মো. মাছুম নামে এক শিশু ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিশুটির পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন রয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোবারক করিম। ঘটনার পর থেকেই শিক্ষক আত্মগোপনে রয়েছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে স্বজনরা মাদ্রাসা থেকে ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। মাছুম সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নে দিঘলী গ্রামের মো. আবদুল হাই’র ছেলে ও ওই মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।
আহত ছাত্রের বাবা আবদুল হাই জানান, মাছুম মাদরাসার আবাসিকে থেকে পড়ালেখা করছে। গত কয়েকমাস ধরে সে অসুস্থ রয়েছে। তবুও সে পড়ালেখার জন্য মাদ্রসায় অবস্থান করছিল। বাড়িতে যেতে বললেও যায়নি। অসুস্থতার কারণে সোমবার ভোরে নিয়মিত প্রাতঃছবকে সে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু শিক্ষক মোবারক এটি মেনে নিতে পারেনি। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মাছুমকে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করে।
এতে মাছুমের পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। একপর্যায়ে মাছুম অচেতন হয়ে পড়ে। পরে অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মাদরাসা থেকে মাছুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
আহত ছাত্র মো. মাছুম বলেন, অসুস্থ থাকায় আমি নিয়মিত ছবকে যেতে পারিনি। এ অপরাধেই শিক্ষক আমাকে বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই ছাত্রকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পিঠ ও কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেত্রাঘাতের জখমের চিহ্ন রয়েছে।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবর হোসেন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমাদেরকে কেউ জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। ওই ছাত্রের পরিবারকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে।
এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের তানজিমুল মিল্লাত একাডেমীর এজাজ রায়হান নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করায় শিক্ষক ছায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের রওযাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবদুল কাদের ছাত্র ইয়াছিন আরাফাতকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে শিক্ষমন্ত্রণালয় ‘শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারিরীক, মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১’ জারি করে। এটি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক – উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, মাদরাসাসহ (আলিমপর্যন্ত) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারিরীক শাস্তি শিশুদের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্গন করে এবং তা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অপমানকর আচরণ
এক্ষেত্রে দেখা যায় সরকারী ও এমপিও ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সরকারের কাছে দায়বধ্যতা ছাড়াও রয়েছে যথা-যথ নিয়োগ যাচাই পক্রিয়া এবং শিক্ষকদের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা । অপর দিকে এধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো তেমন কোন নিয়ম-নীতির পথে না চলে নিজের ইচ্ছেমত চালিয়ে যেতে চায় ।
যার কারনে অহরহ ঘটছে এধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা, তাই কতৃপক্ষের এ ব্ষিয়ে আরো সচেতন হওয়ার সময় এসেছে ।