বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার উত্তর দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কেন এই হিংসা, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ, হত্যাযজ্ঞের মধ্যে নেমে পড়েছি? কেন আমাদের রাফিকে এভাবে নির্যাতিত হয়ে মরতে হয়? কেন? আমি জানি না। এই উত্তর আমাদের রাজনীতিবিদদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সুন্দর বাংলাদেশ দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
বুধবার(১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ‘জিয়া শিশু একাডেমী’ আয়োজিত ‘১০ম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতা শাপলাকুঁড়ি’ উপলক্ষে এক পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শিশুদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি, তোমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে। তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি, এই বাংলাদেশ একটা সুন্দর ও সমৃদ্ধির দেশ হবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এই শিশুরা নির্ভয়ে বিচরণ করবে। কোথায়ও তাদের ওপরে কখনো আঘাত আসবে না। আমাদের মেয়েদেরকে পুড়িয়ে মারবে না। এই স্বপ্নগুলো আমরা দেখি।’
নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে আমরা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। যন্ত্রের কাছে চলে যাচ্ছি। প্রতি মুহূর্তে আমরা প্রযুক্তির কাছে হেরে যাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে একটা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কেন করেছিলাম? আমরা সবাই বইয়ে পড়ি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। তাই না? কিন্তু সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ কেন করেছিলাম? তখন আমরা যে দেশে বাস করছিলাম, সেই দেশটা নিজেদের দেশ বলে মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, কেউ বুঝি আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। আমরা নি:শ্বাস নিতে পারতাম না। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চেয়েছিলাম। সেই কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু যে মানুষটি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং নিজেই অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই মানুষটির নাম জিয়াউর রহমান। তার নামেই এই একাডেমীর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিয়া শিশু একাডেমী’।’
বিএনপি মহাসচিব শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা জিয়াউর রহমানের নামটা শুনেছো। কিন্তু তোমরা জানো না। কারণ তোমাদের বই থেকে আস্তে আস্তে নামটা মুছে দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু নামটা বারবার আমরা বলতে চাই। কারণ যে মানুষটি স্বাধীন মুক্ত বাতাসের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এই কথাটি আজকে ভুলে গেলে চলবে না।’
আয়োজক সংগঠনের মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, ১০ম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতার বিচারক চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ, অভিনেত্রী রিনা খান, শিল্পী শফি মন্ডল, শিল্পী জিনাত রেহানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্যের ১৩টি একক ও ৩টি দলীয় বিষয়ে ক-খ বিভাগে ১ম, ২য়, ৩য় স্থানপ্রাপ্ত ৮৫ জন ক্ষুদে শিল্পী ‘শাপলাকুঁড়ি-২০১৮’ পুরস্কার ও সনদ গ্রহণ করে। পরে তাদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।