পয়লা বৈশাখে কত টাকার বাণিজ্য হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদের ধারণা, সারা দেশে নববর্ষকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ঈদ বা পূজার সঙ্গে বর্ষবরণ উৎসবের তফাত হচ্ছে, এ সময় দেশীয় পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের ঝোঁক থাকে। তাই বৈশাখকেন্দ্রিক বেচাবিক্রিতে গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙা হয়ে ওঠে। দেশের মানুষের পোশাকের জোগান দেওয়ার জন্য পুরান ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, কালীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র-মাঝারি কারখানা গড়ে উঠেছে। এ ধরনের ছয় হাজার কারখানার সংগঠন অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, পয়লা বৈশাখে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়।পোশাকের ব্যবসা উৎসবকেন্দ্রিক। ঈদ ও পূজার পর বড় উৎসব এখন বৈশাখ। ১০-১৫ বছর আগে বৈশাখী পোশাক টুকটাক বিক্রি শুরু হয়। এখন সেটি বহুগুণ বেড়ে গেছে।গতবারের চেয়ে এবার পোশাকের ব্যবসা ২০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাণ গ্রুপের মিষ্টির ব্র্যান্ড মিঠাই বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, জুয়েলারি, ইলেকট্রনিকসহ ৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০-৩৫ টন মিষ্টি ক্রয়াদেশ পায়। সেই চাহিদা মেটাতে ৯ এপ্রিল থেকে তাদের কল্যাণপুরের কারখানায় প্রতিদিন ১০-১২ টন মিষ্টি উৎপাদন হচ্ছিল। যদিও সাধারণ সময়ে দিনে ৩ টন মিষ্টি উৎপাদন করে মিঠাই।ঢাকার কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী গতকাল ৭০০-৭৫০ গ্রাম ওজনের পদ্মার এক হালি ইলিশ ৩ হাজার টাকা এবং ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের পদ্মার ইলিশ ৫ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন। বেশ কয়েক দিন আগের হিমায়িত ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা খুবই ভালো। তবে আগের মতো কাড়াকাড়ি নেই।’ পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বৈশাখী ছুটি কাটাতে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন অনেকে। কেউবা যান বিদেশে। ঈদ ও দুর্গাপূজার সঙ্গে বৈশাখী উৎসবের তফাত হচ্ছে এটি সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসবে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত জনগণ অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা পান। তবে মুনাফার বড় অংশই শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। সে জন্য গ্রামের উৎপাদকদের যদি ক্রেতাদের কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রি সুযোগ করে দেওয়া যায়, তাহলে বৈশাখের বেচাবিক্রিতে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।