ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নব সম্পৃক্ত ৬২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কোনো আপস করা হবে না। এর সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকবে তাদের প্রতিরোধ করা হবে। এমনই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
৬২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ কাউন্সিলর প্রার্থী হলেন- দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শেখদী আবদুল্লাহ মোল্লা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ (ট্রাক্টর), যাত্রাবাড়ী থানা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দনিয়া ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুর রহমান রতন (টিফিন ক্যারিয়ার), জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় ছাত্রসমাজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইব্রাহীম খান জুয়েল (ঘুড়ি), দনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন (রেডিও), দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক বাকের (ঠেলাগাড়ি), দনিয়া ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম সোহাগ (লাটিম) এবং মো. সালাউদ্দিন (র্যাকেট)।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় এলাকাভিত্তিক ভোট পাবেন প্রার্থীরা- এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। নিজ এলাকার কেন্দ্র ছাড়া অন্য এলাকার ভোট কেন্দ্রে যে প্রার্থী ভোট পাবেন ওই প্রার্থীই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোটাররা বলছেন, যাকে দিয়ে এলাকার কাজ হবে তাকেই আমরা ভোট দেব।
এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থী দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক বাকের (ঠেলাগাড়ি) নির্বাচন না করে প্রচারণা বন্ধ করে অপর প্রার্থী আবদুর রহমান রতন মেম্বারকে (টিফিন ক্যারিয়ার) সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন।
৬২ নম্বর ওয়ার্ড যাত্রাবাড়ী থানায় অবস্থিত। সাবেক দনিয়া ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর কুতুবখালী, দক্ষিণ কাজলা, দক্ষিণ কাজলা (নয়ানগন), ছনটেক, ৮নং ওয়ার্ডের শেখদী, ৯নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর, উত্তর রায়েরবাগ নিয়ে গঠন করা হয়েছে এ ওয়ার্ড। ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৩০ জন। পুরুষ ভোটার ২১ হাজার ৭৫০ ও নারী ভোটার ২০ হাজার ৭৮০ জন।
নব সম্পৃক্ত ৬২ নম্বর ওয়ার্ড রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় বরাদ্দ কম থাকায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। অপরিকল্পিত সরু সড়ক ও ঘিঞ্জি পরিবেশে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এমনিতেই এ এলাকা নিচু, তার মধ্যে অপ্রতুল পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতেই এলাকা হাঁটু ও কোমড়সমান তলিয়ে জলাবদ্ধতা হয়। চলে দীর্ঘ জলাবদ্ধতা। এতে বাসিন্দাদের চরম সমস্যা হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়।
ওয়ার্ডের বৃষ্টির ও পয়োনিষ্কাশনের পানি বের হয় মৃধাবাড়ী-শ্যামপুর খালের মাধ্যমে। আর এ খাল অবৈধভাবে দখল, ভরাট করার কারণে খালের পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ডিএনডির চলমান কাজে খালের জায়গা কিছুটা উদ্ধার হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে পুরোদমে উদ্ধার হয়নি। এ নিয়ে নানা কথাও শোনা যাচ্ছে।
মৃধাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া আন্ডারপাস পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের বাড়ির মালিকরা ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ করেছেন ও শনিরআখড়ায় ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ড করে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে। এতে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ওয়ার্ডে রয়েছে মাদকের ছড়াছড়ি। সড়কবাতির অভাবে অলিগলিতে থাকে ঘোর অন্ধকার।
প্রার্থীরা আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। গণসংযোগ, দোয়া, সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণসহ নানা প্রতিশ্রুতি সংবলিত লিফলেট বিতরণে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীন প্রচার প্রচারণা করছেন প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকরা।
কাউন্সিলর প্রার্থী জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় ছাত্রসমাজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহীম খান জুয়েল বলেন, আমার বাবা, চাচাসহ আমার পরিবার সমাজ ও এলাকার উন্নয়নে আজীবন কাজ করে আসছে।
যার ফলে মানুষ আমাদের মনে রাখছে। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, পঞ্চায়েত কমিটিতে আমিও কাজ করে আসছি। যার ফলে আমার ইচ্ছার পাশাপাশি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবিতে আমি কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছি।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন, ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করব। প্রশাসনকে সহায়তা করে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত একটি ডিজিটাল ওয়ার্ড উপহার দেব।
কাউন্সিলর প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ বলেন, মানুষের সেবা করাই আমার আনন্দ। যার জন্য দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শেখদী আবদুল্লাহ মোল্লা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে মানুষের সেবা করে আসছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আমার বিগত দিনের কাজকে মূল্যায়ন করে আমাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হলে একটি আদর্শ ওয়ার্ড উপহার দেব।
কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান রতন বলেন, দনিয়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকার উন্নয়ন কাজ ও বাসিন্দাদের পাশে থেকে তাদের সুখে-দুঃখে কাজ করেছি। আমি আশাবাদী, ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হলে বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের পরামর্শ মোতাবেক এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।
দনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাসহ অত্র এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কাজে প্রায় ১৫ বছর ধরে বাসিন্দাদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে কাজ করে আসছি।
আমি আশা রাখি, আমার বিগত দিনের সেবাকে বিবেচনা করে তাদের অতি মূল্যবান আমানত ভোট দিয়ে আমাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হয়ে আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আদর্শ ওয়ার্ড উপহার দেব।
দনিয়া ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আমি মসজিদ, মাদ্রাসা, পঞ্চায়েত কমিটিসহ সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হয়ে মানুষের সেবা করে আসছি। কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত এবং জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বাসিন্দাদের নাগরিক সমস্যা সমাধান করে একটি মডেল ওয়ার্ড উপহার দিব।